জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : অপরিচিত লোক দেখলে ছুটে যান রাঙ্গুনিয়ার রাণীর হাটে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তরা। খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানো পরিবারের সদস্যরা তাদের করুণ আর্তনাদের কথা সহজেই ব্যক্ত করেন। সমাজের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্তদের তুলনায় তা অপ্রতুল হওয়ায় অভাবী এসব মানুষের মুখে হাসি ফুটছেনা। প্রতিদিন এসব পরিবার অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে তাকে কে এসে তাদের মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করে দেবেন। তাদের দিন যায় সেই আশায়। শতাধিক পরিবারের কমপক্ষে ৫’শত লোকজন চরম অসহায়ের মাঝে দিন কাটলেও তাদের স্থায়ী সমস্যা নিরসনে সরকারি বেসরকারি কার্যকর পদক্ষেপ এখনও গ্রহণ করা হয়নি।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজা নগর ইউনিয়নের রাণীরহাট বাজারের উত্তর-পশ্চিম কলোনী এলাকায় স্মরণকালের সবচেয়ে বড় অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গত ১১ নভেম্বর ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে শতাধিক পরিবারের সহায় সম্বল সবকিছু হারিয়ে এখন নিদ্রাহীন অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। অনেকেই সহায় সম্বলের পাশাপাশি নগদ অর্থসহ শিক্ষার্থীদের পড়ার বই থেকে শুরু করে পরীক্ষার প্রবেশপত্রসহ সবকিছু হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো গত ১ সপ্তাহ ধরে শীতের কনকনে ঠান্ডার কষ্ট শিকার করে নিজের জায়গাটুকু ধরে রাখার জন্য খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে। শতাধিক পরিবারের সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকারও বেশি হলেও এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকা খাওয়ার বাসস্থান না হওয়ায় চরম অনিশ্চয়তার মাঝে এসব গরীব অসহায় পরিবারগুলো বিত্তশালীদের প্রতি সাহায্যের আবেদন জানিয়ে এখনও আশানুযায়ী সারা পাচ্ছেন না। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রশাসন, রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদ, রাণীরহাট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, রাণীরহাট কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি, ইটভাটা মালিক সমিতি, রাঙ্গুনিয়া ইসলামী ফ্রন্টসহ অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নগদ টাকা, কম্বল, খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করলেও তাদের বৃহৎ ক্ষতি পূরন হচ্ছেনা। অনেক পরিবারে জে.এস.সি পরীক্ষার্থী, স্কুল ছাত্রী কিংবা যুবতী মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছে।
অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দিন মজুর মোহাম্মদ শাহজাহান (৫০) জানান, অগ্নিকান্ডে ঘরে জমা রাখা তার ২৭ হাজার টাকা সহ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। তার পরিবারে ৭ জন সদস্য নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যুবতী মেয়েকে নিকটতম আত্মীয়ের বাসায় রেখে তার স্ত্রী রাতে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত চা দোকান কর্মচারী মো. সাগর জানান, তার ঘরে রাখা নগদ ৬৭ হাজার টাকা সহ দেড় লাখ টাকার সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তার শেষ সম্বল নগদ টাকাও বসতঘর হারিয়ে তিনি এখন নি:স্ব ।
রাজা নগর-রাণীরহাট কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। সমিতির পক্ষ থেকে নগদ টাকা, খাবার, শিক্ষার্থীদের পোশাক প্রদান করেছি। তাদের স্থায়ী পূর্ণবাসনের জন্য সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি অচিরেই তাদের সমস্যা নিরসন হবে।
রাজানগর ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার জানান, শতাধিক পরিবারের ক্ষতি পূর্ণবাসনের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রশাসনের প্রতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আবেদন করা হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তাৎক্ষনিকভাবে নগদ টাকা ও কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক নগদ অর্থ বিতরণ করেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে। তাদের স্থায়ী পূর্ণবাসনের লক্ষে সরকারীভাবে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হবে।